গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরের বাসন থানায় দায়ের করা জুলাই হত্যা মামলায় নতুন করে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে দৈনিক নয়া দিগন্তের গাজীপুর প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সাংবাদিক মো. মোজাহিদের নাম। মামলাটি করেছিলেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দত্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সোহেল মিয়া। মামলা নম্বর ৩৪১।
সাংবাদিক মোজাহিদ অভিযোগ করে বলেন, “জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় জীবন বাজি রেখে আমি মাঠে ছিলাম খবর জানাতে। সেই সময়ে একাধিকবার হামলার শিকারও হয়েছি। অথচ আজ আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলায় যুক্ত করা হলো। ৯২ নম্বর আসামির পর আমার নাম ৯৯ নম্বরে রাখা হয়েছে, এরপর আবার ৯৩ থেকে তালিকা চলেছে। এমনকি একই পৃষ্ঠায় আরেকজনকেও ৯৯ নম্বরে রাখা হয়েছে! এতে সহজেই বোঝা যায় কৌশলগতভাবে আমার নাম ঢোকানো হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের আগেও সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের কারণে তাকে তিনটি মামলায় আসামি করা হয়েছিল এবং ২১৯ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে। তারই ধারাবাহিকতায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় নাম যুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সাংবাদিক সমাজের প্রতিক্রিয়া:
গাজীপুর সাংবাদিক পরিষদের উপদেষ্টা শাহান সাহাবুদ্দিন বলেন, “সত্য প্রকাশ রুদ্ধ করার জন্য সাংবাদিকদের টার্গেট করা হচ্ছে। মোজাহিদের মতো নিষ্ঠাবান সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা সাংবাদিক সমাজকে ভয় দেখানোর কৌশল। জাতির স্বার্থে এমন হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।”
দৈনিক ইনকিলাবের শ্রীপুর প্রতিনিধি এমএ মতিন বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাংবাদিকতা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সমাজের। অথচ সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মোজাহিদের নামে দায়েরকৃত মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।”
গাজীপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ক্লাবের সভাপতি ও চ্যানেল আই প্রতিনিধি ফজলুল হক মোড়ল জানান, “সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রবণতা উদ্বেগজনক। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং মামলাটি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি করছি।”
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর জেলা শাখার আমীর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সাহসী সাংবাদিক মোজাহিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে মামলা বাতিল করতে হবে।”
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মূখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট আলী নাছের বলেন, “মোজাহিদ একজন পেশাদার সাংবাদিক এবং গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের মানুষ। তাকে কোনো মামলায় ফাঁসানো উচিত নয়।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য:
শ্রীপুর থানার ওসি আব্দুল বারিক জানান, “বাসন থানায় একটি জুলাই হত্যা মামলা হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব একজন উপপরিদর্শককে দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।”